বিড়ালের কান, চোখ, লোম ও আকার দেখে জাত চিনতে সম্পূর্ণ গাইড
বিড়ালের জাত বোঝা অনেক সময় চোখের সামনেই থাকা একধরনের ধাঁধা। কান, চোখ, লোম ও দেহের আকারের দিকে মনোযোগ দিলে আপনি সহজেই সম্ভাব্য কয়েকটি জাতের মধ্যে সীমিত রাখতে পারবেন এবং অনেক বেশি যুক্তিসংগত অনুমান করতে পারবেন।
কান দেখে কীভাবে বিড়ালের জাত চেনা যায়
বিড়ালের জাতের প্রাথমিক বাছাইয়ে কান একটি দ্রুত ও কার্যকর বৈশিষ্ট্য।
- যেসব বিড়ালের কান সামনের দিকে শক্তভাবে ভাঁজ হয়ে থাকে, তারা সাধারণত স্কটিশ ফোল্ড বা তার ঘনিষ্ঠ সংকর জাতের হতে পারে।
- যেসব বিড়ালের কান বড়, মাথার ওপরের দিকে বসানো, ডগা তীক্ষ্ণ এবং মাথা ত্রিকোণ বা পাটকাঠির মতো সরু হয়, তারা প্রায়ই সায়ামিজ বা ওরিয়েন্টাল ধরনের জাতভুক্ত হয়।
- যেসব বিড়ালের কান অতি বড়, গোড়ার দিকে চওড়া এবং সামগ্রিকভাবে বন্য প্রাণীর মতো চেহারা, তারা অ্যাবিসিনিয়ান বা সাভানা জাতের হওয়া সম্ভব।
- যেসব বিড়ালের কানের ডগা পেছনের দিকে বেঁকে থাকে, তারা সাধারণত আমেরিকান কার্ল জাতের।
- যেসব বিড়ালের কান বড়, সঙ্গে উপরে উঠে থাকা “লিংক্স টিপ” বা গুচ্ছালো লোম থাকে, তারা মেইন কুন বা নরওয়েজিয়ান ফরেস্ট ক্যাট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- মাঝারি আকারের কান, ডগা হালকা গোল এবং খুব বেশি চোখে না পড়া কান–এ ধরনের কান ব্রিটিশ শর্টহেয়ার ও নানা ধরনের গৃহপালিত ছোট লোমওয়ালা সংকর বিড়ালের মধ্যে খুব সাধারণ।
চোখের গঠন ও রঙ থেকে ধারণা নেওয়া
চোখ বিড়ালের জাতের ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক অভিব্যক্তিও প্রকাশ করে।
- লম্বাটে মুখের সঙ্গে বাদামি আকারের, সামান্য তির্যক চোখ থাকা বিড়াল সায়ামিজ, ওরিয়েন্টাল শর্টহেয়ার বা বালিনিজ হতে পারে।
- বড়, গোল, “পেঁচার মতো” চোখওয়ালা বিড়াল দেখতে প্রায়ই ব্রিটিশ শর্টহেয়ার, স্কটিশ ফোল্ড বা পার্সিয়ান জাতের মতো লাগে।
- দৃষ্টি-নিবদ্ধ উজ্জ্বল নীল চোখ আর কালার-পয়েন্ট রঙের শরীর যেসব বিড়ালের থাকে, তারা সাধারণত সায়ামিজ, র্যাগডল বা বর্মা-বিরম্যান জাতের হয়ে থাকে।
- ভিন্নধরনের দুই চোখ—একটি নীল আর অন্যটি সোনালি বা সবুজ—এমন চোখ তুর্কি ভ্যান, তুর্কি অ্যাঙ্গোরা এবং কিছু সাদা গৃহপালিত বিড়ালের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
- সোনালি বা তামাটে চোখ, সঙ্গে চাপা বা চেপ্টা মুখ—এ ধরনের বিড়াল প্রায়ই পার্সিয়ান বা এক্সোটিক শর্টহেয়ার হয়।
- গাঢ় সবুজ চোখ আর টিকিং বা রূপালি আভার লোমওয়ালা বিড়াল রাশিয়ান ব্লু, ইজিপশিয়ান মাউ বা চিনচিলা ধরনের পার্সিয়ান হতে পারে।
লোমের ধরন, নকশা ও দৈর্ঘ্য
বিড়ালের লোমের গঠন জাত চেনার সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লু দিতে পারে।
- লম্বা, ঢেউ খেলানো বা প্রবাহিত লোম আর প্রশস্ত বুকওয়ালা বিড়াল মেইন কুন, নরওয়েজিয়ান ফরেস্ট ক্যাট বা র্যাগডল হতে পারে।
- খুব লম্বা, ঘন লোম আর একেবারে চেপ্টা বা খুব ছোট নাকওয়ালা বিড়াল সাধারণত পার্সিয়ান বা হিমালয়ান ধরনের।
- অর্ধ-লম্বা, মসৃণ-রেশমি লোম এবং কালার-পয়েন্ট নকশা থাকলে তা সাধারণত র্যাগডল বা বর্মা-বিরম্যানের ইঙ্গিত দেয়।
- খুব ছোট, সমান, ঘন ও মখমলের মতো নরম লোম আর খাটো, পেশিবহুল গড়নওয়ালা বিড়াল দেখতে অনেকটা ব্রিটিশ শর্টহেয়ার বা রাশিয়ান ব্লুর মতো লাগে।
- প্রায় লোমহীন ত্বক, বড় কান আর শরীরজুড়ে সহজে চোখে পড়া ভাঁজযুক্ত চামড়া—এ ধরনের বিড়াল সাধারণত স্ফিংক্স বা অনুরূপ লোমহীন জাতের হয়।
- কোট বা লোমে টাইট ঢেউ বা কোঁকড়া ভাব থাকলে বিড়ালটি ডেভন রেক্স, কর্নিশ রেক্স বা লা-পার্ম জাতের হতে পারে।
- টিকিং থাকলে, অর্থাৎ প্রতিটি লোমে একাধিক রঙের আড়াআড়ি দাগ বা ব্যান্ড দেখা গেলে, বিড়ালটি অনেক সময় অ্যাবিসিনিয়ান, সোমালি বা সিঙ্গাপুরা হয়।
- সোনালি পটভূমির ওপর গাঢ় রোজেট বা বড় বড় দাগওয়ালা বিড়াল বেঙ্গল বা ওসিক্যাট জাতের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- মাঝারি দৈর্ঘ্যের লোম, ক্লাসিক কালার-পয়েন্ট নকশা—এ ধরনের বিড়ালের জাত সাধারণত সায়ামিজ-উৎপন্ন বিভিন্ন জাতের মধ্যে পড়ে।
আকার ও গড়ন দেখে জাত অনুমান
দেহের আকার, ওজন ও গড়ন কান, চোখ আর লোম থেকে পাওয়া ধারণাকে আরও শক্তিশালী করে।
- খুব বড়, পেশিবহুল শরীর আর মোটা, ভারী লেজওয়ালা বিড়াল সাধারণত মেইন কুন বা বড় গড়নের গৃহপালিত সংকর জাতের হয়।
- মাঝারি থেকে বড় কিন্তু ক্রীড়াবিদসুলভ গড়ন, লম্বা পা এবং সক্রিয় চেহারার বিড়াল সাভানা, বেঙ্গল বা অ্যাবিসিনিয়ান হতে পারে।
- ঘন, খাটো, গুটিসুটি ধরা গড়ন আর মোটা পা—এ ধরনের বিড়ালকে প্রায়ই পার্সিয়ান, ব্রিটিশ শর্টহেয়ার বা এক্সোটিক শর্টহেয়ার হিসেবে ধরা হয়।
- অতিরিক্ত সরু, লম্বাটে দেহ, সূক্ষ্ম হাড়ের গঠন এবং অত্যন্ত নমনীয় গড়ন সায়ামিজ ও ওরিয়েন্টাল ধরনের জাতের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
- খুব ছোট ও কোমল গড়ন, বড় বড় চোখওয়ালা বিড়াল সিঙ্গাপুরা বা ছোট আকারের গৃহপালিত সংকর হতে পারে।
- আধা-বিদেশি গড়ন, অর্থাৎ না একেবারে চওড়া-খাটো, না আবার অতিরিক্ত সরু—এই মধ্যম গড়ন বহু গৃহপালিত ছোট লোমওয়ালা ও নিবন্ধনবিহীন নানা বিড়ালের মধ্যে সাধারণ।
সব লক্ষণ একত্রে বিচার করা
শুধু একটি বৈশিষ্ট্য দিয়ে কোনো জাত নিশ্চিত করা যায় না, কিন্তু কয়েকটি বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে মিলে গেলে ইঙ্গিত অনেক শক্তিশালী হয়।
- খুব বড় গড়ন, কানের ডগায় লোমের গুচ্ছ, লম্বা ঝোপালো লোম আর মোটা, ঝালর-গুচ্ছওয়ালা লেজ থাকলে তা মেইন কুনের দিকে শক্তভাবে ইঙ্গিত করে।
- নীল চোখ, কালার-পয়েন্ট নকশা, অর্ধ-লম্বা নরম লোম এবং খুবই শান্ত, আরামপ্রিয় স্বভাব—এমন বিড়াল র্যাগডল বা বর্মা-বিরম্যান ধরনের হতে পারে।
- মসৃণ, দাগওয়ালা, মাঝারি-বড় গড়ন আর সামগ্রিকভাবে বন্য শিকারির মতো চেহারার বিড়াল বেঙ্গল বা সাভানা সংকর জাতের ইঙ্গিত দেয়।
- গোল মুখ, ছোট নাক, ঘন ও লম্বা লোম আর তামাটে বা কপার চোখ—এসব বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে থাকলে তা প্রায় নিশ্চিতভাবেই পার্সিয়ান ধরনের বিড়ালকে নির্দেশ করে।
উপসংহার
একটি বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে নয়, বরং কান, চোখ, লোম ও দেহের আকার—এই সবগুলো বৈশিষ্ট্য একত্রে বিচার করলে বিড়ালের জাত শনাক্তকরণ অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য হয়। আপনার বিড়ালের কান, চোখ, লোমের গঠন ও দেহের গড়নকে একসঙ্গে বিবেচনা করে সেই প্রোফাইলটি পরিচিত জাতগুলোর মানদণ্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন। সন্দেহ থাকলে বিড়ালটিকে কোনো নির্দিষ্ট জাত বলার বদলে “অমুক ধরনের বৈশিষ্ট্যযুক্ত সংকর” হিসেবে উল্লেখ করাই নিরাপদ। একেবারে নির্ভুল উত্তর জানতে চাইলে, এই ভিজ্যুয়াল গাইডের পাশাপাশি পশু-চিকিৎসক, জাত–সংক্রান্ত ক্লাব বা জিনগত পরীক্ষার সাহায্য নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।







