অতিরিক্ত লোমশ বিড়াল: নরম জাত ও পরিচর্যার সহজ নিয়ম
নরম, মেঘের মতো লোমওয়ালা বিড়াল সত্যিই অদম্য আকর্ষণীয়, কিন্তু এত লোমের নিয়মিত যত্ন দরকার। কোন কোন জাত সবচেয়ে বেশি লোমশ এবং কীভাবে তাদের গ্রুমিং করলে লোম সুন্দর ও সুস্থ থাকে, তা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লোমশ বিড়ালের জাত: সবচেয়ে নরম লোমওয়ালা প্রজাতি
পার্সিয়ান
পার্সিয়ান বিড়াল তাদের ঘন, লম্বা, মসৃণ লোম আর গোল মুখের জন্য বিখ্যাত।
- তাদের লোম খুব সহজেই জট বেঁধে যায়, বিশেষ করে বগল, পেটের নিচে এবং কানের পেছনে।
- চ্যাপ্টা মুখওয়ালা (ব্র্যাশাইসেফালিক) পার্সিয়ানদের চোখ ও মুখ পরিষ্কার রাখতে অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হতে পারে, কারণ অশ্রু দাগ লোমের মান খারাপ করতে পারে।
র্যাগডল
র্যাগডল বিড়ালের লোম মাঝারি থেকে লম্বা, স্পর্শে নরম ও তুলতুলে, কিন্তু অনেক দীর্ঘ লোমওয়ালা জাতের তুলনায় কম জট বাধে।
- তাদের লোম খুব নরম, সামান্য “খরগোশের লোমের” মতো, প্রায়ই মসৃণ, রেশমি অনুভূতি দেয়।
- সাধারণত তারা কোলে নেওয়া ও ধরাধরি ভালোভাবেই সহ্য করে, যা নিয়মিত গ্রুমিংকে অনেক সহজ করে তোলে।
মেইন কুন
মেইন কুন বিড়ালের ঘন, জল-রোধী দ্বৈত লোম থাকে, ঘাড়ে ফুঁপিয়ে থাকা কেশর আর পালকের মতো লেজ তাদের আলাদা করে।
- তাদের লোম ঘাড়, পেট আর পায়ের চারপাশে বেশি লম্বা থাকে, আর সেখান থেকেই প্রথমে জট শুরু হয়।
- মৌসুমি লোম ঝরা অনেক বেশি হয়, আর যখন তারা একবারে প্রচুর পুরোনো লোম ফেলে দেয়, তখন গ্রুমিংয়ের প্রয়োজনও অনেক বেড়ে যায়।
সাইবেরিয়ান
সাইবেরিয়ান বিড়ালের তিন স্তরের লোম থাকে, যা ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য তৈরি; এতে ঘনত্বের সঙ্গে থাকে আশ্চর্যজনক কোমলতাও।
- শীতকালে তাদের নীচের লোমের স্তর অনেক ঘন হয়, আর গরমের সময় তা প্রচুর পরিমাণে ঝরে যায়।
- লোমের পরিমাণ বেশি হলেও, নিয়মিত ব্রাশ করলে তাদের লোম সাধারণত সহজে জট ধরে না।
ব্রিটিশ লংহেয়ার
ব্রিটিশ লংহেয়ার বিড়াল অনেকটা নরম খেলনা ভালুকের মতো, ঘন ও মাঝারি লম্বা, ফুঁপিয়ে থাকা লোমে ঢাকা।
- তাদের লোম ঝরে পড়া ঢেউয়ের মতো নয়, বরং বেশ ফুঁপিয়ে থাকা ও ফুলো fluffy ধরনের, যা তাদের মোটামুটি গোল, নরম চেহারা দেয়।
- নিয়মিত ব্রাশ করলে লোম গুটিয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া বা ভেতরে ভেতরে গোপন গিঁট তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।
লোমশ বিড়ালের গ্রুমিং করার নিয়ম
দৈনিক ও সাপ্তাহিক ব্রাশ করা
- লম্বা লোমওয়ালা বিড়ালকে অন্তত সপ্তাহে ৩–৫ দিন ব্রাশ করুন, আর লোম ঝরার মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই ব্রাশ করা ভালো।
- প্রথমে চওড়া দাঁতের চিরুনি বা সরু লোম তুলতে পারে এমন ব্রাশ ব্যবহার করে ওপরের দিকের জট আস্তে আস্তে খুলে নিন।
- এরপর সূক্ষ্ম দাঁতের চিরুনি দিয়ে ভেতরের নীচের লোম পর্যন্ত পৌঁছে ছোট ছোট জট দ্রুত খুঁজে বের করুন।
- প্রতিটি সেশন ছোট ও শান্ত রাখুন, আর ভালো আচরণের জন্য একটু খাবার বা টুকিটাকি পুরস্কার দিন, যাতে গ্রুমিংয়ের সঙ্গে ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে ওঠে।
জট বাঁধা প্রতিরোধ ও জট দূর করা
- প্রতিদিন ঘর্ষণ বেশি হয় এমন জায়গা পরীক্ষা করুন—বগল, বুক, পেটের নিচে, উরুর ভেতরের দিক ও কানের পেছনে।
- ছোট লোমের জট হলে প্রথমে আঙুল দিয়ে খুব আলতোভাবে আলাদা করার চেষ্টা করুন, তারপর চিরুনি ব্যবহার করুন।
- শক্ত, ঘন জটের ক্ষেত্রে বিশেষ জট কাটার সরঞ্জাম ব্যবহার করা ভালো, অথবা ঝুঁকিপূর্ণ অংশে নিজে কাঁচি চালানোর বদলে পেশাদার গ্রুমারের সাহায্য নিন।
- কোনো গিঁট কখনোই জোরে টেনে খুলতে চেষ্টা করবেন না; এতে বিড়ালের ব্যথা হয় এবং গ্রুমিংকে তারা ভয় পেতে শুরু করে।
গোসল ও লোমের বাড়তি যত্ন
- দরকার না হলে লোমশ বিড়ালকে ঘনঘন গোসল করাবেন না; অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়ে গেলে, খুব নোংরা হলে, অথবা পশু-চিকিৎসকের বিশেষ পরামর্শে গোসল করান।
- সবসময় বিড়ালের জন্য নিরাপদ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন এবং ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন, যাতে কোনো আস্তর থেকে গিয়ে লোম নিস্প্রভ না করে।
- তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে পানি মুছে, বিড়াল সহ্য করলে কম তাপের হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে পুরোপুরি শুকিয়ে নিন, যাতে ঠান্ডা না লাগে ও নতুন জট না বেঁধে যায়।
- ভারী ধরনের কন্ডিশনার থেকে দূরে থাকুন, কারণ এগুলো প্রাকৃতিকভাবে ফুঁলানো লোমকে ভারী করে ঝুলে যেতে পারে—তবে কোনো পেশাদার যদি বিশেষ কারণে পরামর্শ দেন, তখন ব্যবহার করতে পারেন।
লোম ঝরা ও হেয়ারবল সামলানো
- মৌসুমি লোম ঝরার সময় ব্রাশ করার মাত্রা বাড়িয়ে দিন, যাতে নীচের ঢিলা লোম আগে থেকেই উঠে যায়।
- আপনার বিড়াল যদি নিজেকে প্রচুর চেটে পরিষ্কার করে, তাহলে হেয়ারবল কমাতে সাহায্যকারী খাবার বা পশু-চিকিৎসকের অনুমোদিত বিশেষ পেস্ট দিতে পারেন।
- সবসময় টাটকা পানি আর ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ সুষম খাবার সরবরাহ করুন, যা ত্বক ও লোমের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- ঘরের ছড়িয়ে থাকা লোম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করুন এবং বিড়ালের বিছানা ও ব্যবহার্য কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলুন।
কখন পেশাদার গ্রুমার বা ভেটের কাছে যাবেন
- আপনার বিড়ালের শরীরে বড় বড় জট তৈরি হলে, ঘরে গ্রুমিং করতে না দিলে, বা তার চলাফেরার সমস্যা (যেমন বয়সজনিত ব্যথা) থাকলে পেশাদার গ্রুমারের সময় নিন।
- পুরো শরীরের লোম পুরোপুরি কামিয়ে ফেলার বদলে “স্বাস্থ্যসম্মত ট্রিম” বা পেছনের অংশ ও পেটের আশপাশ সামান্য ছেঁটে দেওয়া, আর হালকা ছাঁট দেওয়ার অনুরোধ করুন, যাতে প্রাকৃতিক সুরক্ষা বেশিরভাগটাই বজায় থাকে।
- হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বেশি লোম ঝরা, খালি লোমহীন দাগ, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, বা বিড়াল যদি নিজেকে পরিষ্কার করা এড়িয়ে চলে—এগুলো দেখলে দ্রুত পশু-চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- আপনার বিড়ালের নির্দিষ্ট জাত, লোমের গঠন ও স্বভাব অনুযায়ী কোন ধরনের ধরে রাখা ও কোন ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার সবচেয়ে ভালো হবে, সে বিষয়ে ভেট বা পেশাদার গ্রুমারের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
পার্সিয়ান, র্যাগডল, মেইন কুন, সাইবেরিয়ান আর ব্রিটিশ লংহেয়ারের মতো অতিরিক্ত লোমশ বিড়ালের নিয়মিত পরিচর্যার ফলেই তাদের লোম থাকে চোখধাঁধানো সুন্দর ও নরম। নিয়মিত ব্রাশ করা, শুরুতেই ছোট জট ধরে ফেলা এবং সঠিক সরঞ্জাম ব্যবহার—এই সহজ অভ্যাসগুলো বিড়ালের লোমকে রাখে সুস্থ, আর আপনাদের মধ্যে বন্ধনটাও আরও মজবুত করে। যদি কখনো বড় জট বা ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে শুরুতেই পেশাদারের সাহায্য নিন। আজ থেকেই সহজ একটি গ্রুমিং রুটিন গড়ে তুললে, আপনার বিড়াল বহু বছর ধরে থাকবে আরও নরম, আর আরও আনন্দী।








